রতন রায়হান, রংপুর: সংবাদ সম্মেলনে হত্যাকারীদের বিচার ও পরিবারের নিরাপত্বা দাবি জানিয়েছেন এবং পুলিশের বিরুদ্ধে পিতার খুনের মামলার এজাহার পরিবর্তনে বাধ্য করার অভিযোগ পুত্রের।
পুলিশের বিরুদ্ধে মামলার এজাহার পরিবর্তন করতে বাধ্য করার অভিযোগ এনে সংবাদ সম্মেলন করেছেন খুনের শিকার এক কৃষকের এইচএসসি পড়ুয়া সন্তান। তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে পুলিশ।
সোমবার ( ৬ নভেম্বর) দুপুরে রংপুর রিপোর্টার্স ক্লাব মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে এই অভিযোগ আনেন পীরগাছার দেউতি এলাকায় খুন হওয়া কৃষক আবু তাহেরের পুত্র রাসেল মিয়া। রাসেল দেউতি কলেজের ইন্টারমিডিয়েট দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী । এসময় তার সাথে ছিলেন খুনের শিকার তাহেরের একমাত্র ছোট মেয়ে তাম্মিম আকতার, স্ত্রী রশিদা বেগম, মা তাহেরা বেগম, বাবা আনারুল্লাহ, ভাই জাকির হোসেন, সমন্ধি ইউসুফ আলী। সংবাদ সম্মেলনে রাসেলের অভিযোগ, তার পিতা ঘটনার সময় মামা মানিকের বাড়িতে দাওয়াত খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। রাতে হট্রগোলের খবর পেয়ে ঘুম ভেঙ্গে যায়। তখন স্থানীয় যুবলীগ নেতা লিটনের নেতৃত্বে তার পিতাকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। কিন্তু থানায় যুবলীগ নেতা লিটন ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতির ভাই তৈয়বের নামসহ এজাহার দিলে তা গ্রহন করেনি পুলিশ। পরে পুলিশ বাধ্য করে এজাহার পরিবর্তন করে মামলা দিতে। ঘটনার দিন ২ জনকে গ্রেফতার করা হলেও বাকিদের এখনও গ্রেফতার করা হচ্ছে না। বরং আসামীরা নানাভাবে হুমকি ধামকি দিচ্ছে। মামলা তুলে না নিলে বিএনপি-জামায়াতের মামলায় নাম দিয়ে জেলের ভাত খাওয়ানোর হুমকি দিচ্ছে। এতে নিরাপত্বাহীনতায় ভুগছি আমরা। সংবাদ সম্মেলনে পিতা হত্যাকারীদের গ্রেফতার, যথাযথ বিচার এবং পরিবারের নিরাপত্বা দাবি করেছেন রাসেল। সংবাদ সম্মেলনে রাসেল বলেন, আমরা দুই ভাইবোন অকালে পিতাকে হারিয়ে একেবারে অভিভাবকহীন হয়ে পড়েছি। আমাদের পরিবারের উপার্জনক্ষম পিতাকে হারিয়ে আমরা আজ দিশেহারা। আমি জানিনা কোথায় কখন কার নিকট গেলে আমার পিতাকে হত্যার ন্যায় বিচার পাবো। বর্তমান পরিস্থিতিতে আমি দিশেহারা। কিভাবে চলবে আমাদের জীবন, কি হবে দুই ভাই বোনের লেখার পড়া? কোন কিছুর উত্তর জানা নেই আমাদের। একটি নিরুপায় দিশেহারা পরিবার আজ আপনাদের দারস্ত হয়েছে শুধু ন্যায় বিচার পাবার আশায়। আমার বিধবা মা, এতিম ছোট বোন শিশু তাম্মীম আক্তার ও আমি বিশ্বাস করি, আপনাদের বিবেকের কলমের মাধ্যমেই আমার পরিবার পেতে পারে সঠিক বিচার।সংবাদ সম্মেলনে নিহত তাহেরের মা তাহেরা বেগম বলেন, ঘটনার দিন শুধু ২ জনকে পুলিশ নিয়ে গেছে। আর কোন আসামী ধরছে না। আমরা গরীব ও নিরীহ মানুষ হওয়ার পুলিশ আমাদের কোন কথা শুনতেছে না। তারা বলে বেড়াচ্ছে মামলা তুলে না নিলে বিএনপি জামায়াতের মামলায় দিয়ে জেলের ভাত খাওয়াবে। এখন আমি দুটি অবুঝ সন্তানকে ও তাদের মাকে নিয়ে কোথায় যাই।
নিহত তাহেরের পিতা আনারুল্লাহ(৬৭) অভিযোগ করেন, তৈয়ব ও লিটনের নাম বাদ দেয়া না পর্যন্ত ওসি আমাকে থানা থেকে বের হতে দেয় নি। এমনকি প্রশ্রাব করতে গেলেও আমার সাথে পুলিশ গার্ড দিয়ে রেখেছিল। পরে বাধ্য হয়ে আমরা এজাহার চেঞ্জ করে দেই। সংবাদ সম্মেলনে নিহতের ভাই জাকির হোসেন বলেন, মামলার এজাহার পরিবর্তন করা নিয়ে আমার ভাইয়ের জানাযার নামাজও পেছাতে হয়েছে। দিন ১১ টায় থানায় যাই এজাহার নিয়ে। কিন্তু এজাহারে যুবলীগ নেতার লিটন ক্লাবের নাম ও উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতির ভাইয়ের নাম থাকায় ওসি এজাহার পরিবর্তন করার জন্য পাঠায়। রাত ১০ টায় ভাইয়ের জানাযার সময় দেই। কিন্তু তখনও আমি থানায়। ওসিকে আমি অনুরোধ করি, যে ভাইয়ের জানাযা করে তারপর মামলার কি পরিবর্তন করা লাগে করবো। কিন্তু তিনি সেটা মানেন নি। পরে জানাযার সময় পরির্বতন করে সাড়ে ১১ টা দেই। বাধ্য হয়ে ওসি যেভাবে লিখতে বলেছেন সেভাবে এজাহার লিখে দিয়ে এসে ভাইয়ের জানাযা করি। এখন আমার নিরাপত্বাহীনতায়। আমার ভাই তসলিম মিয়ার কাছে ক্ষমাও চেয়ে এসেছে। কিন্তু তারপরেও তিনি সন্তুষ্ট হন নি। আমরা ন্যায় বিচার চাই। নিরাপত্তা চাই। এজাহার পরিবর্তনের ব্যাপারে পীরগাছা থানার ওসি মাসুমুর রহমান জানান, ওই ঘটনায় বাদীপক্ষ নিজ ইচ্ছাতেই তাদের এজাহার পরিবর্তন করেছে। পুলিশ বাধ্য করার অভিযোগ সত্য নয়। এ ঘটনার দিনই ২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকি আসামীদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত আছে।ঘটনাটি জানতে উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি তছলিম উদ্দিনের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেন নি। ফলে তার বক্তব্য পাওয়া সম্ভব হয় নি।
প্রসঙ্গত: ১৬ অক্টোবর মধ্যরাতে দেউতি বাজার এলাকায় মানিকের বাড়িতে হামলা চালায় দুর্বৃত্বরা। এসময় তাদের ছুরিকাঘাতে খুন হন দাওয়াত খেতে আসা মানিকের বোনজামাই আবু তাহের।


0 coment rios: