সংবাদ শিরোনাম
লোডিং...
Menu

Saturday, December 25, 2021

বাগেরহাটের মোংলায় ইউপি মেম্বারের হাত থেকে বাচঁতে গির্জায় গিয়ে প্রার্থনা

বাগেরহাট প্রতিনিধিঃবাগেরহাটের মোংলায় ইউপি মেম্বার জাহাঙ্গির মল্লিক ও তার সন্ত্রাসী বাহিনীর হাত থেকে রক্ষা পেতে বড় দিনে গির্জায় গিয়ে প্রার্থনা করেছে নির্যাতনের শিকার ভুক্তভোগী পান্না মন্ডল ও মালগাজী এলাকার সংখ্যালগু খ্রিষ্টান সম্প্রদয়ের লোকজন। শনিবার সকালে মিশন বাড়ীর গির্জা থেকে বড়দিনের ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের দেখে একথা জানায় ওই এলাকার অসহায় শত শত নারী-পুরুষরা। দীর্ঘ প্রায় ৮ বছর যাবত দলীয় নতুন ক্ষমতা পাওয়ায় জাহাঙ্গীর মল্লিক, ভাই আলমগীর মল্লিক, ভাগ্নে রাহাত ইজারাদারসহ তার বাহিনীর হাতে ইজ্জাত হারানো, লাঞ্চিত ও মারধরে শিকার হওয়া মানুষগুলো জিম্মি হয়ে পরেছে। নারীরা মেম্বারের কথা না শুনলেই রাতের অন্ধকারে নেমে আসে অমানষিক নির্যাতন,



সাংবাদিকদের এমন বর্নণা দিলেন স্থানীয় নারী নেত্রী স্নিগদা মন্ডল। সর্ব শেষ গত ১৮ ডিসেম্বর সকাল ১০টায় রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় জাহাঙ্গীর মল্লিককে সালাম না দেয়ায় নারী গৃহবধু ও কলেজ ছাত্রসহ ৫ জনকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে আহত করার অপরাধে ইউপি মেম্বারসহ ৭জনের বিরুদ্ধে মোংলা থানায় মামলা হয়েছে। আসামী গ্রেফতার না হওয়ায় মেম্বার ও তার সন্ত্রাসী বাহিনীর হুমকিতে অবরুদ্ধ অবস্থায় নিরাপত্তা হীনতায় ভুগছে আহত নারী ও পান্না মন্ডলের পরিবারসহ মিশনবাড়ী এলাকার খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের লোকজন। এ নিয়ে এলাকায় সংখ্যালগু সম্প্রদয়ের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে।

মালগাজী মিশনবাড়ী এলাকার বেশীর ভাগই হিন্দু ও খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের লোকজনের বসবাস। এক সময়ের বিএনপি নেতা জাহাঙ্গীর মল্লিক গত অনুমান ৯ থেকে ১০ বছর আগে ক্ষমতাশীন দলে যোগ দেয়ার পর থেকেই বেপরোয়া হয়ে ওঠে সে এবং তার পরিবারের সদস্যরা। সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালিয়ে নির্বাচিত হয় চাদপাই ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ড দক্ষিন মালগাজী গ্রামের ইউপি সদস্য। দীর্ঘদিন থেকেই জমি ও নির্বাচনী বিষয় নিয়ে দন্দ চলে আসছিল স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা ও দু’দুবারের ইউপি সদস্য জাহাঙ্গির মাল্লিকের সাথে মিশনবাড়ী এলাকার পান্না মন্ডলের। একতো ক্ষমতাশীন দলের নেতা, অন্যদিকে স্থানীয় ইউপি মেম্বার, ক্ষমতার দাপটে এলাকায় গড়ে তুলছে সন্ত্রাসী বাহিনী। জমি ও ঘের দখল, ঘেরের মাছ লুট, হিন্দু ও খৃষ্টীয়ান সম্প্রদায়ের লোকজনের উপর অত্যাচার-নির্যাতন এবং সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের সাথে জড়িত নারী লোভী এ ইউপি সদস্য জাহাঙ্গির মল্লিক। এ ব্যাপারে বহুবার প্রশাসনের দপ্তরে অভিযোগ দিয়েও প্রতিকার পায়নী বলে খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের নারী-পুরুষের অভিযোগ।
সম্প্রতি ১৮ ডিসেম্বর সকাল সাড়ে ১০টার দিকে রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় দোকানে বসা পান্না মন্ডলের ছেলে মেম্বারকে সালাম না দেয়ায় কলেজ ছাত্র তুফান মন্ডল (২৪) কে পিটিয়ে হাত-পা ভেঙ্গে দেয় মেম্বার জাহাঙ্গির ও তার লোকজন। এসময় তার বাবা ও স্থানীয়রা প্রতিবাদ করে তুফানকে তার হাত থেকে বাচাঁতে গেলে সাথে থাকা ৭/৮ জনের সন্ত্রাসী বাহিনী সুব্রত মন্ডল-(৫০), গৃহবধু মিনু সরকার-(৫০), সুব্র সরকার(২৪) ও সোহাগ সরকার-(৩৫)কে কুপিয়ে ও পিটিয়ে রক্তাক্ত জখম করে। স্থানীয়রা রক্তাক্ত অবস্থায় আহতদের উদ্ধার করে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। আহত তুফান মন্ডলের অবস্থা অবনতি দেখে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য দ্রুত খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। আর গৃহবধু মিনু সরকার’র মাথায় ১৩টি সেলাইর ক্ষত নিয়ে অন্যান্য আহতরা মোংলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যন্ত্রনায় কাতরাচ্ছে।
এব্যাপারে তুফানের বাবা পান্না মন্ডল বাদি হয়ে একটি অভিযোগ দাখিল করলে ২দিন পর সোমবার বিকালে ইউপি সদস্য জাহাঙ্গীর মল্লিক, রাহাত ইজারাদার, ফারুক, জাহিদ, আতিয়ার, অমিত ও মারিও বিশ্বাসের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করে মোংলা থানা।
মেম্বার জাহাঙ্গির মল্লিক, তার আত্বীয় স্বজন ও সর্বক্ষনিক সাথে থাকা সন্ত্রাসী বাহিনীর ভয়ে এলাকায় তার বিরুদ্ধে কথা বলতে সাহস পায়না কেহই। সামনে দিয়ে হেটে যাওয়া বা তার কর্মকান্ডে প্রতিবাদ করলেই বেশীর ভাগই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর নেমে আসে নির্মম নির্যাতন। দীর্ঘ প্রায় ৮ থেকে ১০ বছর এমনই নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়ে আসছে মিশনবাড়ী এলাকার গরিব ও অসহায় খ্রিস্ট্রান সম্প্রদয়ের লোকজন বলে অভিযোগ করেন অনেকেই। মামলা হওয়ার পরেও প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে জাহাঙ্গীর মল্লিক ও তার সন্ত্রাসী বাহিনীরা। এছাড়াও ভাই আলগীর মল্লিক ও মেম্বারের পরিবারের অন্য সদস্যরা মামলা তুলে নেয়ারও হুমকী দিচ্ছে বলে অভিযোগ করে বলেন ভুক্তভোগী মামলার বাদী ও নির্যাতনের শিকার মানুষগুলো।
মামলার প্রধান আসামী ইউপি সদস্য জাহাঙ্গীর মল্লিক'র সাথে যোগাযোগ করা হলে মুঠোফোনে বলেন, পান্না মন্ডলসহ অন্যান্যরা প্রার্থনাতো দুরের কথা তারা গির্জায়ই যায় নি। আজ শনিবার সকালে উপমন্ত্রী কাকীমা বড় দিনের শুভেচ্ছা বিনিময়ের জন্য হঠাৎ মিশনবাড়ী গির্জায় গেলে সাথে আমাদের লোকজন সেখানে ছিল তবে আমি উপস্থিত ছিলাম না। আর ঘটনার পর থেকে তাদের কোন হুমকী ধামকি বা ভয়ভিতী দেখানো হয়নী।

মোংলা থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মাদ মনিরুল ইসলাম বলেন, মালগাজী এলাকার অসহায় কয়েকজন খ্রিষ্টান সম্প্রদয়ের লোকজনকে মারধর করার অভিযোগে মোংলা থানায় ইউপি সদস্য জাহাঙ্গীর মল্লিককে প্রধান করে ৭জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। কয়েকজন আসামী শুনেছি আদালত থেকে জামিন নিয়েছে আর বাকি আসামীদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত আছে।

শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.

0 coment rios: