মোঃ আসাদুজ্জামান আসাদ, কাউনিয়া (রংপুর) প্রতিনিধিঃকাউনিয়া উপজেলায় ৬টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় আগের মত আর চোখে পড়েনা কাঁশফুল। কাশবন নষ্ট করে তৈরি হচ্ছে ফসলি জমি ও বসতি। নানা কারনে বিলুপ্তির পথে চরাঞ্চলের এই প্রাকৃতিক সৌন্দয্য। এর প্রধান কারণ দিনে দিনে আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে জনসংখ্যা সে সাথে যৌথ পরিবারগুলো ভেঙে একাধিক পরিবারে পরিণত হচ্ছে।
বালাপাড়ার গদাইচরের প্রবীণরা জানান, প্রয়োজনের তাগিদে মানুষ পতিত জমি, পুকুরপাড়, বিলেরধার, নদীরধারে জেগে উঠা পতিত জমিগুলো ফসলীজমি ও বসত বাড়িতে পরিণত করায় কাশবনের দ্রূত বিলুপ্ত হচ্ছে। কয়েকবছর পূর্বে উপজেলার চরঢুষমারা,পাঞ্জরভাঙ্গা, আযম খাঁ চর, হয়বত খাঁ চর, তিস্তারতীড়সহ ইত্যাদি এলাকায় আপনা-আপনি গড়ে উঠত কাঁশবন। মানুষ কাঁশবনে ফুল হওয়ার পর তা কেটে রোদে শুকিয়ে পালাকওে রাখতেন। এগুলো জ্বালানি হিসেবে ব্যবহারকরাসহ ঘর-বাড়ি তৈরী, বেড়া দেয়া, ঝাঁটা তৈরি, পানের বর তৈরি, শিম, কুমড়া, লাউ, শশা, খিরা, মিষ্টি কুমড়ারটাল তৈরিতে ব্যবহার করা হতো। কাঁচা থাকাকালে গরু-মহিষ-ছাগলের খাদ্য হিসেবে ব্যবহার হতো। কাশের খড় দিয়ে তৈরি ঘর খুব ঠান্ডা হওয়ায় গরমকালে মানুষ ফ্যান ছাড়াই মানুষ ঘুমাতে পারত, বসবাস করতে পারতো। সারি সারি কাঁশবনের খড় দিয়ে তৈরি ঘর শোভাবর্ধন করত, দেখতে কি সুন্দরলাগত। কিন্তু ওইসব এখন রূপকথার গল্পমাত্র, এ যুগে কেউ বিশ্বাস করতে চাইনা।
কাউনিয়া কাঁশফুল সাহিত্য ও সংস্কৃতি পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি একএম নুরে আলম সিদ্দিকী সাজু বলেন, কবির ভাষায় অনেকে বলত, আনন্দের শিউলির সুগ্ধ নিয়ে প্রকৃতিতে আসে শরৎ। খোলা প্রান্তরে কাশের গুচ্ছ আর নীল আকাশে চলে সাদা মেঘের ভেলা আর সোনালি উজ্জ্বল রোদের খেলা। শরৎ যেনরাঙিয়ে তোলেনিজস্ব বর্ণ ও গন্ধ দিয়ে। হিমেল হাওয়া তিস্তা নদীর আঁকাবাঁকা স্রোতের গন্তব্য এক অজানা পথে। তিস্তা নদী মাঝির পালের হাওয়ায় বকসাদা কাঁশফুলগুলো দোলে মনের আনন্দে। অবরিত কাশফুলের স্নিগ্ধ উপস্থিতিই এক সময় জানানদিত এখন শরতকাল। কিন্তু সে কাশফুল দিনে দিনে বিলুপ্ত হতে চলেছে।
তিস্তা ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক শাহ মোবাশেরুল ইসলাম রাজু বলেন, কাঁশবন চাষে বাড়তি পরিচর্যা, জমিচাষ, সার প্রয়োগের প্রযোজন নেই। প্রকৃতিগতভাবে আপনা-আপনি বিজ ছিটিয়ে পড়ে এর জন্ম হয়। মানুষ সচেতন হলে আবার কাঁশবনে ভরে উঠতে পারে বাড়ির চারপার্শ্ব, নদীরধার, পুকুরপাড়, রাস্তার দুধার, ডোবাবা নদীপাড়। সরকারিভাবে কাঁশফুল সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয়া জরুরি।


0 coment rios: